সামরিক শক্তি বৃদ্ধি: বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার অবিচ্ছেদ্য অংশ

Bangladesh Army Bangladesh flag
বাংলাদেশ একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র। ১৯৭১ সালে দীর্ঘ রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে এই দেশ অর্জন করেছে তার স্বাধীনতা। তবে স্বাধীনতা অর্জনের পরও একটি দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করতে হলে কেবল কূটনৈতিক তৎপরতা যথেষ্ট নয়; প্রয়োজন একটি শক্তিশালী ও আধুনিক সামরিক কাঠামো। বর্তমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে যখন আন্তর্জাতিক রাজনীতি ক্রমেই জটিল থেকে জটিলতর হচ্ছে, তখন সামরিক সক্ষমতা বৃদ্ধি বাংলাদেশের জন্য সময়োপযোগী ও জরুরি হয়ে উঠেছে।

বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূ-অবস্থান দখল করে আছে। পূর্বদিকে মিয়ানমার, পশ্চিমে ভারত, আর দক্ষিণে বিস্তীর্ণ বঙ্গোপসাগর। এই অঞ্চলের ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতি বরাবরই স্পর্শকাতর। মিয়ানমারের সঙ্গে রোহিঙ্গা সংকটসহ সীমান্ত ইস্যু এখনো সম্পূর্ণ সমাধান হয়নি। অন্যদিকে বঙ্গোপসাগরের তেল-গ্যাস সম্পদ ও সামুদ্রিক সীমান্তের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে বাংলাদেশের নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীকে আরও আধুনিকায়ন করতে হবে। শুধু শান্তিপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখাই যথেষ্ট নয়, বরং প্রয়োজন সম্ভাব্য হুমকি মোকাবেলায় প্রস্তুত থাকা।

একটি শক্তিশালী সামরিক বাহিনী কেবল যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি নয়, বরং এটি দেশের সার্বভৌমত্ব ও স্বাধীনতার প্রতীক। যে জাতি তার আত্মরক্ষায় দুর্বল, সে জাতিকে কখনোই বিশ্বের দরবারে মর্যাদা দেয়া হয় না। অন্যদিকে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় শক্তিশালী হলে বৈরী শক্তিরা অনেক ক্ষেত্রেই হুমকি দিতে সাহস পায় না। এমনকি বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখার ক্ষেত্রেও একটি উন্নত সামরিক কাঠামো কূটনৈতিক আলোচনাকে আরও শক্তিশালী ভিত্তি দেয়।

বাংলাদেশের সামরিক বাহিনী বরাবরই দেশের প্রয়োজনে অসামান্য অবদান রেখেছে। বিশেষ করে প্রাকৃতিক দুর্যোগে উদ্ধার তৎপরতা, অবকাঠামো নির্মাণ, স্বাস্থ্যসেবা, এমনকি শান্তিরক্ষী বাহিনীতে অংশগ্রহণের মাধ্যমে বিশ্বের কাছে বাংলাদেশের পরিচিতি বাড়িয়েছে। তবে এই অবদানকে আরও কার্যকর ও যুগোপযোগী করতে হলে প্রযুক্তি নির্ভর আধুনিক সামরিক সরঞ্জাম ও প্রশিক্ষণ নিশ্চিত করা প্রয়োজন। বর্তমান বিশ্বে যুদ্ধের ধরন বদলে গেছে। আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর সাইবার যুদ্ধ, ড্রোন প্রযুক্তি, স্যাটেলাইট নজরদারি — এসব ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে আরও অগ্রসর হতে হবে।

সবচেয়ে বড় কথা, বাংলাদেশ যুদ্ধ চায় না, তবে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য শক্তি অর্জনের বিকল্প নেই। স্বাধীনতা রক্ষা করতে হলে শক্ত অবস্থান থাকতে হবে। বিশ্বরাজনীতিতে বাংলাদেশের যে সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে, তা বাস্তবায়ন করতে হলে নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষার বিষয়টি উপেক্ষা করা যাবে না।

একটি আত্মবিশ্বাসী, উন্নয়নশীল ও মর্যাদাসম্পন্ন বাংলাদেশ গড়তে হলে সামরিক সক্ষমতা বৃদ্ধি এখন সময়ের দাবি। এটি কোনো বিলাসিতা নয়, বরং স্বাধীন জাতি হিসেবে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর অপরিহার্য শর্ত।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ