অবৈধ অর্থ উদ্ধারের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের করণীয় কী?

অবৈধভাবে পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার বিষয়টি বাংলাদেশের জন্য শুধু অর্থনৈতিকভাবে নয়, নৈতিক ও রাষ্ট্রীয়ভাবে এক অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যদি বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এই অর্থ ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়, তাহলে সেটি হতে পারে দেশের উন্নয়ন, স্থিতিশীলতা এবং জনগণের আস্থার এক মোড় ঘোড়ানো সুযোগ।

এই অর্থের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করতে হলে সেটিকে অবশ্যই জনকল্যাণমূলক কাজে নিয়োজিত করতে হবে। বাংলাদেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে রয়েছে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, দারিদ্র্য, দুর্নীতি, বেকারত্ব ও জলবায়ু সংকট—যেখানে পাচারকৃত অর্থ ব্যয় করলে তা দীর্ঘমেয়াদে জনগণের জীবনে বাস্তব পরিবর্তন আনতে পারে। শিক্ষা খাতে এই অর্থ ব্যয় করে গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলের স্কুলগুলোর অবকাঠামো উন্নয়ন, মানসম্পন্ন শিক্ষক নিয়োগ, প্রযুক্তিনির্ভর পাঠদান ব্যবস্থা চালু করা যেতে পারে। এতে করে সমান সুযোগের ভিত্তিতে একটি জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গড়ে উঠবে।

স্বাস্থ্য খাতেও বড় পরিবর্তন আনা সম্ভব। আজও দেশের বহু মানুষ প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত। সরকারি হাসপাতালগুলোর পরিকাঠামো উন্নয়ন, ওষুধ ও চিকিৎসা যন্ত্রপাতির সরবরাহ বৃদ্ধি, প্রশিক্ষিত ডাক্তার ও নার্স নিয়োগ—এই সবকিছু বাস্তবায়ন করা গেলে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি অনেকাংশে কমে আসবে।

অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল জনগোষ্ঠীর জন্য সামাজিক নিরাপত্তা বলয়ের বিস্তার অত্যন্ত জরুরি। বয়স্ক, বিধবা, প্রতিবন্ধী ও অসহায়দের জন্য যথাযথ ভাতা প্রদান এবং তাদের জীবনমান উন্নয়নের উদ্যোগ গ্রহণ করা যেতে পারে এই অর্থ দিয়ে। একইভাবে, কৃষকদের জন্য সহজ শর্তে ঋণ, আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি এবং সঠিক বাজার ব্যবস্থা গড়ে তুলতে বিনিয়োগ করা গেলে গ্রামীণ অর্থনীতির ভিত্তি আরও মজবুত হবে।

তরুণদের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি এই মুহূর্তে এক বড় প্রয়োজন। পাচার হওয়া অর্থ দিয়ে উদ্যোক্তাদের সহায়তা, টেকনিক্যাল প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন, এবং নতুন স্টার্টআপে বিনিয়োগের মাধ্যমে একটি কর্মমুখর সমাজ গঠন করা সম্ভব। এটি শুধুমাত্র বেকারত্ব কমাবে না, বরং আত্মকর্মসংস্থানের মাধ্যমে দেশের সামগ্রিক উৎপাদনশীলতা বাড়াবে।

একই সঙ্গে দুর্নীতি প্রতিরোধ এবং সুশাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ডিজিটাল প্রযুক্তির মাধ্যমে সরকারি ব্যবস্থাপনাকে স্বচ্ছ, জবাবদিহিমূলক ও জনগণের কাছে সহজলভ্য করে তোলা যায়। তথ্য অধিকার নিশ্চিত করা, গণমাধ্যমকে শক্তিশালী করা, এবং নাগরিক সমাজকে সম্পৃক্ত করে একটি জবাবদিহিমূলক শাসনব্যবস্থা গড়ে তোলা এই অর্থ ব্যবহারের আরেকটি গঠনমূলক খাত হতে পারে।

সবশেষে, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলা, পরিবেশ রক্ষা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের পুনর্বাসনে অর্থ ব্যবহার করতে পারলে দেশের দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা সম্ভব। পাচার হওয়া অর্থ ফেরত এনে তা জনকল্যাণমূলক কাজে ব্যয় করার এই সুযোগকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যদি বাস্তবায়ন করতে পারে, তাহলে তা হবে এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ—যা জাতিকে শুধু আর্থিকভাবে নয়, নৈতিকভাবেও উন্নত অবস্থানে নিয়ে যাবে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ