ইসরায়েলি হামলা ও পশ্চিমা চাপের মুখেও ইরান আপোষহীন | চালিয়ে যাচ্ছে লড়াই

মধ্যপ্রাচ্য দীর্ঘদিন ধরেই রাজনৈতিক অস্থিরতা ও আগ্রাসনের কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। বিশেষ করে ফিলিস্তিন ভূখণ্ডে ইসরায়েলের দখলদারিত্ব এবং ফিলিস্তিনি জনগণের ওপর পরিচালিত নির্যাতন আজ বিশ্ববিবেকের জন্য লজ্জাজনক অধ্যায়। দিনের পর দিন শিশু, নারী, নিরীহ সাধারণ মানুষ নিষ্ঠুরভাবে হত্যার শিকার হচ্ছে, বাড়িঘর ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। এই বর্বরতার বিরুদ্ধে যারা সরব হয়েছে, তাদের মধ্যে ইরান অন্যতম। ইরান শুধু কথায় নয়, বাস্তব সমর্থন ও সহায়তার মাধ্যমে ফিলিস্তিনের সংগ্রামী জনগণের পাশে দাঁড়িয়েছে

ইসরায়েলের এসব হামলা থামানোর পরিবর্তে বরং পশ্চিমা শক্তিগুলো ইরানের বিরুদ্ধেই ঐক্যবদ্ধ হয়ে গেছে। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপের বেশিরভাগ বড় বড় রাষ্ট্র ইরানের ওপর চাপ সৃষ্টির নানাবিধ চেষ্টা করছে। কখনো অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা, কখনো রাজনৈতিক চাপে রাখার অপপ্রয়াস, আবার কখনো সামরিক হুমকি। লক্ষ্য একটাই—ইরানকে নিরস্ত করা, যেন তারা আর ফিলিস্তিনসহ মধ্যপ্রাচ্যের নির্যাতিত মুসলিম জনগণের পাশে দাঁড়াতে না পারে।

ইরান এই চক্রান্ত ভালোভাবেই বুঝতে পেরেছে। তারা জানে, পশ্চিমা বিশ্ব কখনোই ফিলিস্তিনিদের পক্ষে অবস্থান নেবে না, কারণ তাদের মূল লক্ষ্য হলো মধ্যপ্রাচ্যে ইসরায়েলের আধিপত্য বজায় রাখা। ইসরায়েলকে কেন্দ্র করে পশ্চিমাদের যে আগ্রাসী নীতি, তার মূল শিকার হচ্ছে ফিলিস্তিনিরা। অথচ, ইরান যখন এই অবিচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানায়, তখন সেটিকেই উল্টোভাবে বিশ্বমাধ্যমে নেতিবাচকভাবে উপস্থাপন করা হয়।

কিন্তু সবকিছুর পরও ইরান তাদের অবস্থান থেকে একচুলও সরেনি। ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনেয়ী থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ পর্যন্ত একবাক্যে উচ্চারণ করে এসেছে—ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা শুধু একটি ভূখণ্ডের মুক্তির লড়াই নয়, বরং এটি মানবতার লড়াই। যারা নির্যাতিত, নিপীড়িত, তাদের পাশে দাঁড়ানো মানবিক দায়িত্ব।

এদিকে পশ্চিমা মিডিয়া ও কূটনৈতিক মহল ইরানকে বর্বর, সন্ত্রাসবাদের মদদদাতা ইত্যাদি অপবাদ দিতে ব্যস্ত। অথচ প্রকৃত বর্বরতা কারা চালাচ্ছে, তা গোটা বিশ্ব দেখছে। ইসরায়েল ফিলিস্তিনে গণহত্যা চালাচ্ছে, তবু তাদের বিরুদ্ধে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে না। বরং যারা প্রতিবাদ করছে, তাদেরকেই চাপে রাখা হচ্ছে। ইরান সেই প্রতিবাদী কণ্ঠগুলোর অগ্রভাগে অবস্থান করছে।

পশ্চিমাদের এই দ্বিমুখী নীতির কারণেই মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি আসছে না। তারা চায়, ইরান যেন ইসরায়েলের এসব আগ্রাসনের বিরুদ্ধে মুখ বন্ধ রাখে। কিন্তু ইরান আপোষ করেনি, করবেও না। বরং পশ্চিমা চক্রান্ত যত বাড়বে, ততই ইরান তাদের অবস্থানকে আরও শক্ত করবে। ইরান বুঝে গেছে—এই লড়াই শুধু একটি দেশের নয়, এটা গোটা মুসলিম উম্মাহর মর্যাদার লড়াই। এটা হচ্ছে অত্যাচারীর বিরুদ্ধে মজলুমের লড়াই।

আজ বিশ্ব বিবেকের সামনে বড় প্রশ্ন—কোনটা সঠিক? নিরীহ মানুষদের রক্তপাত নাকি তাদের মুক্তির পক্ষে দাঁড়ানো? ইরান সেই প্রশ্নের জবাব বারবার দিয়ে আসছে তাদের সাহসী অবস্থানের মাধ্যমে। পশ্চিমা চাপ, ইসরায়েলের আগ্রাসন—সবকিছু উপেক্ষা করে ইরান আজও আপোষহীন। তারা জানে, ন্যায় ও সত্যের পথ সহজ নয়, কিন্তু এই পথেই ইতিহাসের সত্য বিজয়ী হয়।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ