প্রথমেই দরকার একটি সুসংগঠিত ও বাস্তবভিত্তিক পরিবহন পরিকল্পনা। শহরের প্রতিটি রোড, অলিগলি ও বাণিজ্যিক এলাকার জন্য আলাদা ট্রাফিক মডেল তৈরি করতে হবে। সেই সঙ্গে দরকার একীভূত ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র, যা রিয়েল টাইম ডেটার ভিত্তিতে সিগনাল ও যানচলাচল পরিচালনা করবে। বিদেশি উদাহরণ অনুসরণ করে ‘ইন্টেলিজেন্ট ট্রান্সপোর্ট সিস্টেম’ চালু করা যেতে পারে, যা ট্রাফিক ক্যামেরা, সেন্সর ও ডেটা বিশ্লেষণ ব্যবহারের মাধ্যমে যানবাহন নিয়ন্ত্রণে সহায়ক হবে।
পরবর্তী ধাপে সরকারকে গণপরিবহন খাতকে যুগোপযোগী ও আকর্ষণীয় করে তুলতে হবে। একাধিক বাস কোম্পানিকে একত্র করে একটি কর্পোরেট পদ্ধতিতে পরিচালনা করা হলে বাস চলাচলে শৃঙ্খলা আসবে। মেট্রোরেল, বিআরটি (বাস র্যাপিড ট্রানজিট), এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে এবং সাবওয়ে প্রকল্পগুলো দ্রুত ও গুণগত মান বজায় রেখে বাস্তবায়ন করতে হবে। এর পাশাপাশি শহরজুড়ে ‘পার্ক অ্যান্ড রাইড’ সিস্টেম চালু করা হলে ব্যক্তিগত গাড়ির উপর নির্ভরতা কমবে।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও অফিসসমূহের সময়সূচি ভাগ করে দিলে নির্দিষ্ট সময়ে অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি হবে না। আবার, অনলাইন শিক্ষার সুবিধা ও ওয়ার্ক ফ্রম হোম সংস্কৃতিকে উৎসাহিত করলে ট্রাফিক চাপ অনেকাংশে কমানো সম্ভব। দীর্ঘমেয়াদে নাগরিকদের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করা, যেমন ট্রাফিক আইন মেনে চলা, গণপরিবহন ব্যবহারে উৎসাহ দেওয়া, এবং পরিবেশবান্ধব যাতায়াত যেমন সাইকেল ব্যবহারে উৎসাহিত করাও এই রোডম্যাপের অংশ হতে পারে।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে একটি কেন্দ্রীয় ও নির্ভরযোগ্য পরিবহন কর্তৃপক্ষ গঠন, যারা সকল পরিকল্পনা, বাস্তবায়ন ও নজরদারির দায়িত্বে থাকবে। নাগরিকদের অভিযোগ গ্রহণ, তাৎক্ষণিক সমাধান এবং জনমত গ্রহণের ডিজিটাল মাধ্যম চালু করলে সরকার ও জনগণের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধি পাবে।
সর্বশেষে বলা যায়, যানজট শুধু সড়কের সমস্যা নয়, এটি আমাদের জীবনযাত্রার মান, অর্থনীতি ও পরিবেশের ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলে। তাই সরকার যদি আন্তরিকভাবে বহুমাত্রিক পদক্ষেপ গ্রহণ করে এবং তা ধারাবাহিকভাবে বাস্তবায়ন করে, তবে যানজট মুক্ত একটি কর্মচঞ্চল শহর গড়ে তোলা সম্ভব।
0 মন্তব্যসমূহ
আশা করি আপনারা সবাই ভদ্রতা বজায় রেখে কমেন্ট করবেন আমার ব্যক্তিগত মতামত আপনার ভালো না লাগলে এড়িয়ে চলুন।
ধন্যবাদ