ড. ইউনুসের অর্থনৈতিক দর্শন মূলত মানুষের ক্ষমতায়নের ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে। তিনি বিশ্বাস করেন, দারিদ্র মানুষের মধ্যে শুধুমাত্র আর্থিক সহায়তা প্রদান করলেই তাদের জীবনের পরিবর্তন সম্ভব নয়; বরং তাদের আত্মবিশ্বাস ও উদ্যোক্তা শক্তিকে উদ্দীপিত করাই সমাধানের মূল চাবিকাঠি। গ্রামীণ ব্যাংক তাই তাদের ঋণ দান পদ্ধতিতে ঐতিহ্যবাহী ব্যাংকিং ব্যবস্থার বাইরে গিয়ে, গ্রামীণ মানুষের হাতে সহজলভ্য ও স্বল্পসুদে ক্ষুদ্রঋণের ব্যবস্থা করেছে।
ড. ইউনুসের এই ধারণাটি যে “ব্যাংক যাবে ঋণগ্রহীতার বাড়িতে” তা তাঁর বিপ্লবী চিন্তাধারাকে ফুটিয়ে তোলে। গ্রামীণ ব্যাংকের কর্মীরা ঋণপ্রার্থীর কাছে পৌঁছে তাদের আর্থিক প্রয়োজন বুঝে দ্রুত ঋণ প্রদান করে থাকেন। এর ফলে গ্রামীণ জনগণ ব্যাঙ্কের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন না হয়ে আর্থিক ব্যবস্থা থেকে সরে পড়ে না, বরং তারা নিজ উদ্যোগে অর্থ উপার্জনে সক্ষম হয়।
গ্রামীণ ব্যাংকের এই মডেল বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অনুকরণীয় হয়ে উঠেছে। এটি শুধু বাংলাদেশেই সীমাবদ্ধ নয়, বিশ্বব্যাপী দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য নতুন সম্ভাবনার দরজা খুলে দিয়েছে। ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রমের মাধ্যমে দরিদ্ররা কৃষি, ক্ষুদ্র শিল্প, ব্যবসা ইত্যাদিতে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছেন, যা তাদের জীবনমান উন্নত করেছে।
ড. ইউনুসের অর্থনৈতিক দর্শন ও গ্রামীণ ব্যাংকের কার্যক্রম প্রমাণ করে যে অর্থনৈতিক উন্নয়ন কেবলমাত্র বড় অর্থনৈতিক নীতিমালা বা বড় বড় ঋণ দিয়ে নয়, বরং ছোট ছোট মানুষের জীবন পরিবর্তনের মাধ্যমে সমাজের সর্বাঙ্গীন উন্নতি সম্ভব। তার এই দৃষ্টিভঙ্গি অর্থনীতির ক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে, যেখানে দরিদ্র মানুষের অর্থনৈতিক অংশগ্রহণই কেন্দ্রবিন্দু।
নোবেল পুরস্কার পাওয়ার মাধ্যমে ড. ইউনুস ও গ্রামীণ ব্যাংক শুধু বাংলাদেশেই নয়, বিশ্বব্যাপী দরিদ্রতা মোকাবিলায় মাইক্রোফিন্যান্সের গুরুত্ব তুলে ধরেছেন। এর ফলে সামাজিক ব্যবসা, অর্থনৈতিক ন্যায়বিচার ও মানবকল্যাণের পথ প্রশস্ত হয়েছে। ড. ইউনুসের জীবন ও কাজ আমাদের শেখায়, মানবসেবা ও উদ্ভাবনী চিন্তাধারা নিয়ে যে কেউ সমাজে বিশাল পরিবর্তন আনতে পারেন।
0 মন্তব্যসমূহ
আশা করি আপনারা সবাই ভদ্রতা বজায় রেখে কমেন্ট করবেন আমার ব্যক্তিগত মতামত আপনার ভালো না লাগলে এড়িয়ে চলুন।
ধন্যবাদ