ভারত একটি বৃহৎ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র। এই দেশটি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে গণতন্ত্র, মানবাধিকার এবং প্রতিবেশী সম্পর্কের পক্ষে কথা বলে। কিন্তু বাস্তবতায় সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) যেভাবে গুলি চালায় এবং তা প্রায়ই প্রাণঘাতী হয়—তা এক ভয়াবহ অসামঞ্জস্য তুলে ধরে। ভারতীয় কর্তৃপক্ষের এই আচরণ নির্মম ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের স্পষ্ট উদাহরণ।
ভারত সরকার সব সময় বলে থাকে, সীমান্তে গুলি চালানো হয় আত্মরক্ষার জন্য বা চোরাচালান প্রতিরোধে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, গরু বা কিছু পণ্য চোরাচালানের দায়ে কি কারো প্রাণ নেওয়া ন্যায়সংগত? একজন মানুষকে গুলি করে হত্যা কোনোভাবেই আইনি কিংবা নৈতিক হতে পারে না। চোরাচালান একটি অপরাধ হলেও তার বিচার হওয়া উচিত আদালতে, সীমান্তে নয়।
আর এখানেই বাংলাদেশ সরকারের দূর্বলতা স্পষ্টভাবে ধরা পড়ে। প্রতিবেশী দেশের প্রতি বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রক্ষা করতে গিয়ে বাংলাদেশ সরকার প্রায়ই সীমান্তে ঘটে যাওয়া হত্যাকাণ্ড নিয়ে কঠোর অবস্থান নিতে ব্যর্থ হয়। প্রতিবাদ করা হয় কূটনৈতিক ভাষায়, কখনোবা মুখে মুখে। কিন্তু এই নীরবতা বা নরম নীতি সীমান্তবাসীর জীবনকে আরও অনিরাপদ করে তোলে।
বাংলাদেশ সরকার বরাবরই বলে আসছে যে তারা কূটনৈতিকভাবে বিষয়টি তুলে ধরছে, আলোচনা করছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, সেই আলোচনা কতটা কার্যকর হচ্ছে? প্রতিবার সীমান্তে বাংলাদেশির মৃত্যু হয়, ভারত দুঃখ প্রকাশ করে, বাংলাদেশ মাপা ভাষায় বিবৃতি দেয়, তারপর আবার সব কিছু আগের মতো চলতে থাকে। এই চক্র যেন কোনোভাবেই থামছে না।
এমন একটি প্রেক্ষাপটে প্রয়োজন ছিল একটি শক্ত অবস্থান। বাংলাদেশ সরকার যদি প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে প্রকৃত বন্ধুত্ব চায়, তবে সে বন্ধুত্ব হতে হবে মর্যাদার ভিত্তিতে, আত্মসম্মানের ভিত্তিতে। সীমান্তে নিরীহ নাগরিকদের জীবন যেন কেবল পরিসংখ্যান হয়ে না থাকে, তার জন্য চাই বাস্তব পদক্ষেপ, চাই জোরালো কূটনৈতিক চাপ, চাই জনগণের পাশে দাঁড়ানোর সাহস।
সীমান্ত হত্যা কেবল একটি দেশের মানুষের মৃত্যুই নয়, এটি একটি রাষ্ট্রের নৈতিক পরাজয়ও বটে। ভারত সরকারকে অবশ্যই বুঝতে হবে—প্রতিবেশীর প্রতি সহিংসতা নয়, বরং সহমর্মিতা ও ন্যায়বিচারই একটি সুস্থ আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ভিত্তি।
0 মন্তব্যসমূহ
আশা করি আপনারা সবাই ভদ্রতা বজায় রেখে কমেন্ট করবেন আমার ব্যক্তিগত মতামত আপনার ভালো না লাগলে এড়িয়ে চলুন।
ধন্যবাদ