বর্তমান বিশ্বে ইন্টারনেট এমন একটি অবিচ্ছেদ্য প্রযুক্তি হয়ে দাঁড়িয়েছে, যা ছাড়া আধুনিক জীবনধারা কল্পনা করাই কঠিন। অফিস, শিক্ষা, ব্যবসা, ব্যাংকিং, এমনকি বিনোদন সবই এখন ইন্টারনেটের ওপর নির্ভরশীল। তবে এই প্রযুক্তির বিস্তার যেমন সুবিধা এনে দিয়েছে, তেমনি বাড়িয়ে দিয়েছে নিরাপত্তা ঝুঁকি। সাইবার অপরাধ, হ্যাকিং, ফিশিং, ডাটা চুরি ইত্যাদি এখন প্রতিনিয়ত আমাদের তথ্য এবং গোপনীয়তার ওপর হুমকি সৃষ্টি করছে। এ অবস্থায় ইন্টারনেট নিরাপত্তা সম্পর্কে সচেতনতা এবং কিছু প্রাথমিক সুরক্ষা ব্যবস্থা গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরি।
একজন ব্যবহারকারীর প্রথম করণীয় হচ্ছে শক্তিশালী পাসওয়ার্ড ব্যবহার নিশ্চিত করা। অনেকেই সহজেই অনুমানযোগ্য পাসওয়ার্ড যেমন নিজের নাম, জন্মতারিখ বা ‘123456’ জাতীয় সাধারণ কোড ব্যবহার করেন, যা হ্যাকারদের জন্য অত্যন্ত সহজ লক্ষ্যবস্তু। একটি নিরাপদ পাসওয়ার্ড হতে হবে বড় অক্ষর, ছোট অক্ষর, সংখ্যা এবং বিশেষ চিহ্নের সমন্বয়ে গঠিত। তদুপরি, প্রতিটি প্ল্যাটফর্মে আলাদা পাসওয়ার্ড ব্যবহার করাই নিরাপত্তার জন্য উপযোগী।
ইন্টারনেট ব্যবহার করতে গিয়ে ফিশিং আক্রমণ একটি বড় ঝুঁকি হিসেবে বিবেচিত। সাধারণত মেইল বা মেসেজের মাধ্যমে কোনও লোভনীয় অফার কিংবা জরুরি সতর্কবার্তা দিয়ে ব্যবহারকারীকে ভুয়া লিংকে ক্লিক করানো হয়। এসব লিংকের মাধ্যমে হ্যাকাররা আপনার লগইন তথ্য চুরি করতে পারে। এমন ইমেইল বা মেসেজ পেলেই তার উৎস যাচাই করা এবং কোনওরকম ব্যক্তিগত তথ্য না দেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ।
অনেক ব্যবহারকারী নিয়মিত তাদের অপারেটিং সিস্টেম ও অ্যাপস আপডেট করেন না, যা একটি বড় ভুল। সফটওয়্যার নির্মাতারা প্রায়ই নিরাপত্তা সংক্রান্ত ত্রুটি ঠিক করে নতুন আপডেট প্রকাশ করেন। এসব আপডেট ইনস্টল না করলে ডিভাইস হ্যাকারদের জন্য উন্মুক্ত হয়ে পড়ে। তাই সবসময় ডিভাইস ও অ্যাপস আপডেট রাখার অভ্যাস গড়ে তোলা উচিত।
বর্তমানে অধিকাংশ জনপ্রিয় অনলাইন সেবায় টু-ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন (2FA) সুবিধা চালু আছে, যা আপনার অ্যাকাউন্টে এক ধাপ বাড়তি নিরাপত্তা নিশ্চিত করে। শুধুমাত্র পাসওয়ার্ড দিলেই নয়, লগইন করার সময় একটি কোড মোবাইলে আসে যা না দিলে অ্যাকসেস সম্ভব হয় না। এই ব্যবস্থা হ্যাকারদের জন্য অতিরিক্ত বাধা সৃষ্টি করে এবং অ্যাকাউন্ট নিরাপদ রাখে।
অনেক সময় আমরা বিভিন্ন পাবলিক স্থানে ফ্রি Wi-Fi ব্যবহারের সুযোগ নিই। যদিও এতে ইন্টারনেট খরচ কমে, কিন্তু এর মাধ্যমে ডেটা চুরি হওয়ার আশঙ্কা অনেক বেশি। পাবলিক Wi-Fi ব্যবহার করলে কখনোই ব্যাংকিং বা ব্যক্তিগত তথ্য সংশ্লিষ্ট কাজ করা উচিত নয়। প্রয়োজনে নিরাপদ VPN সার্ভিস ব্যবহার করে ডেটা এনক্রিপশন নিশ্চিত করা যেতে পারে।
কম্পিউটার বা স্মার্টফোনে ভালো মানের অ্যান্টিভাইরাস ও ফায়ারওয়াল ব্যবহার করাও নিরাপত্তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। অনেক ক্ষেত্রে বিনামূল্যের অ্যান্টিভাইরাস সাময়িক সুরক্ষা দিলেও পেইড সফটওয়্যার অধিক কার্যকর। ফায়ারওয়াল সক্রিয় রাখলে সন্দেহজনক ট্রাফিক আটকানো সহজ হয় এবং এটি অজান্তে ডিভাইস থেকে ডেটা বেরিয়ে যাওয়া ঠেকাতে সহায়তা করে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যক্তিগত তথ্য অতিরিক্ত প্রকাশ করাও বিপজ্জনক। জন্ম তারিখ, মোবাইল নম্বর, অবস্থান ইত্যাদি তথ্য হ্যাকারদের কাছে মূল্যবান হতে পারে। অজানা ব্যক্তি বা সন্দেহজনক প্রোফাইল থেকে আসা ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট গ্রহণ করা উচিত নয় এবং প্রাইভেসি সেটিংস সবসময় কড়াকড়ি রাখা উচিত।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো—নিজেকে সচেতন রাখা। প্রযুক্তি প্রতিনিয়ত পরিবর্তন হচ্ছে, সেই সঙ্গে হ্যাকারদের কৌশলও আধুনিক হচ্ছে। তাই সাইবার নিরাপত্তা নিয়ে নিয়মিত আপডেট থাকা, নতুন হুমকি সম্পর্কে জানা এবং পরিবার-পরিজনকেও সচেতন করা জরুরি।
ইন্টারনেটের সুবিধা গ্রহণ করার পাশাপাশি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এখন সময়ের দাবি। একজন দায়িত্বশীল ব্যবহারকারী হিসেবে আপনাকে শুধু প্রযুক্তি ব্যবহার করলেই চলবে না, নিরাপদভাবে ব্যবহার করাটাও শিখতে হবে। সচেতন থাকুন, সুরক্ষিত থাকুন।
0 মন্তব্যসমূহ
আশা করি আপনারা সবাই ভদ্রতা বজায় রেখে কমেন্ট করবেন আমার ব্যক্তিগত মতামত আপনার ভালো না লাগলে এড়িয়ে চলুন।
ধন্যবাদ