ঈদের আনন্দ হোক সবার জন্য—কোরবানির সামাজিক দিকগুলো জেনে নিন

কোরবানি সম্পর্কিত ছবি

ঈদুল আজহা মুসলিম সমাজে একটি তাৎপর্যপূর্ণ ধর্মীয় উৎসব, যার মূল শিক্ষা ত্যাগ, সাম্য এবং মানবিকতা। ইসলাম কোরবানিকে শুধুমাত্র একটি আচার নয়, বরং একটি সামাজিক দায়িত্ব ও মানবিক চেতনার বহিঃপ্রকাশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।

কোরবানির অন্তর্নিহিত বার্তা

কোরবানি শুধু পশু জবাইয়ের নাম নয়; এটি আত্মিক শুদ্ধি, খোদাভীতি এবং সামাজিক দায়িত্ববোধের প্রতীক। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেন:

"তাদের মাংস ও রক্ত আল্লাহর কাছে পৌঁছে না; বরং পৌঁছে তোমাদের তাকওয়া।"
— (সূরা হজ্জ: ৩৭)

এই আয়াত আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়, কোরবানির মাধ্যমে আমরা শুধুমাত্র একটি ধর্মীয় দায়িত্ব পালন করি না, বরং মানবিক মূল্যবোধের চর্চাও করি।

সামাজিক ন্যায়বিচার ও অংশীদারিত্ব

কোরবানির অন্যতম উদ্দেশ্য হলো সমাজের প্রত্যেক শ্রেণিকে ঈদের আনন্দে সম্পৃক্ত করা। অনেক পরিবার সারা বছর গোশত কিনতে অক্ষম। কোরবানির মাধ্যমে সেই মানুষগুলো অন্তত একদিন ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে পারে।

তিনভাগে গোশত বণ্টনের বিধান—নিজের জন্য, আত্মীয়দের জন্য, এবং গরিবদের জন্য—একটি ভারসাম্যপূর্ণ সমাজ গঠনে ইসলামিক দৃষ্টিভঙ্গির বাস্তব উদাহরণ।

সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্যের প্রতীক

যখন সমাজের ধনী-গরিব সবাই ঈদের আনন্দে শামিল হয়, তখন সমাজে সৃষ্টি হয় সৌহার্দ্য, সহানুভূতি ও ভ্রাতৃত্ববোধ। কোরবানি মানুষকে একে অপরের প্রতি দায়িত্বশীল করে তোলে। এটি আত্মকেন্দ্রিকতা ভেঙে সমাজকেন্দ্রিক চিন্তা গড়ে তোলে।

কোরবানি যেন অহংকারের প্রদর্শনী না হয়

বর্তমানে অনেকেই কোরবানিকে প্রতিযোগিতার মাধ্যম হিসেবে গ্রহণ করছেন—কে বড় পশু দিতে পারলো, কে বেশি ছবি বা ভিডিও প্রচার করলো। এই প্রবণতা কোরবানির মূল শিক্ষা থেকে আমাদের বিচ্যুত করে।

একজন মুসলমানের উচিত কোরবানির সময় বিনয়, গোপন দান ও প্রকৃত তাকওয়ার প্রকাশ ঘটানো। রাসূলুল্লাহ (সা.) গোপনে সাদকা বা দানকে অত্যন্ত প্রশংসনীয় বলেছেন।

শেষ কথা 

কোরবানি যেন হয় এমন একটি ইবাদত, যা মানুষের হৃদয়ে দয়া সৃষ্টি করে, সমাজে ন্যায় ও সহমর্মিতা প্রতিষ্ঠা করে, এবং দরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিত মানুষের জীবনে কিছুটা হলেও আনন্দ যোগায়।

আসুন, এবারের কোরবানিকে বানিয়ে তুলি হৃদয়ের কোরবানি—যেখানে থাকবেন আপনি, আপনার সমাজ, আর সেই মানুষগুলো যাদের মুখে আমরা হাসি ফোটাতে পারি।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ