যার কাঁধে ভর করে স্বপ্ন দেখি তিনি আমার বাবা | Voice of Ashfaque

বাবা—এই মানুষটার কথা আমরা অনেক সময় খুব একটা বলি না। মা-কে নিয়ে আবেগ প্রকাশ করা সহজ, কারণ তিনি সবসময় কাছেই থাকেন, প্রকাশ্য ভালোবাসা দেন। কিন্তু বাবা? তিনি থাকেন একটু দূরে, একটু রূঢ়, একটু কঠিন। অথচ ভিতরে ভিতরে তিনি যেন একটা পাহাড়—যার ছায়াতেই আমরা নির্ভয়ে বড় হয়ে উঠি।

ছোটবেলায় বাবার কাঁধেই বসে হাটে যাওয়া, মেলায় ঘোরা, ঈদের দিনে নতুন জামা পরে বাবা পাশে দাঁড়ালে যেন একটা আলাদা আত্মবিশ্বাস তৈরি হতো। বাবা তখন বুঝিয়ে দিতেন—‘আমি আছি, ভয় পাস না।’

আমার স্কুলের খরচ, নতুন বই, জামা-কাপড়, হঠাৎ করে চাওয়ার কিছু—সব কিছুতেই একটা নিশ্চয়তা ছিল বাবার দিকে তাকালেই। তিনি হয়তো কখনো বলেননি, “ভালোবাসি”, কিন্তু সময়মতো পাশে থেকেছেন। সংসার চালাতে গিয়ে নিজের চাওয়া অনেক সময় ফেলে রেখেছেন, হয়তো এখনও রাখেন।

অনেক সময় বিরক্তও হয়েছি তাঁর কথায়, রাগ করেছি, বুঝিনি কেন তিনি এত নিয়ম-কানুন বোঝান। এখন যখন একটু বড় হয়েছি, দেখি—এই নিয়মগুলোই জীবনটাকে গুছিয়ে নিতে সাহায্য করছে। তিনি হয়তো আবেগপ্রবণ নন, কিন্তু দায়িত্বশীল—যেটা জীবনের সবচেয়ে দরকারি গুণ।

আজ বুঝি, বাবার কাঁধ শুধু শৈশবের ভরসার জায়গা নয়, সেটাই ছিল স্বপ্ন দেখার একটা মজবুত ভিত্তি। এখনো যখন সিদ্ধান্ত নিতে হিমশিম খাই, মনে পড়ে বাবার দৃঢ়তা। যেখানেই থাকি, এই মানুষটা জানে আমি কীভাবে চলছি—সেটা প্রকাশ না করলেও বোঝে।

সব বাবা হয়তো একরকম নয়। কেউ বেশি কথা বলেন, কেউ কম। কিন্তু একটা বিষয় কমন—তারা চুপচাপ দায়িত্ব নেয়, চাপ নেয়, এবং সন্তানকে একটু ভালো জায়গায় দেখতে চায়। এটা কোনো নাটকীয় ভালোবাসা নয়, বরং বাস্তব জীবনেই সবচেয়ে কার্যকর ভালোবাসা।

আমার বাবাও ঠিক তেমনই। নিঃশব্দে পাশে থেকেছেন সবসময়।তিনি হয়তো নায়ক নন সিনেমার মতো, কিন্তু জীবনের বাস্তব গল্পে—তিনি-ই আমার প্রথম ও আসল নায়ক।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ